অতঃপর তিনি আল্লাহু আকবার বলে রাফউল ইয়াদাইন করা ছাড়াই সিজদায় চলে যেতেন। তিনি প্রথমে উভয় হাঁটু এবং পরে উভয় হাত মাটিতে রাখতেন।[1] অতঃপর কপাল ও নাক। এ পদ্ধতিই সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। মোটকথা সিজদায় যাওয়ার সময় যমীনের অধিক নিকটবর্তী অঙ্গ প্রথমে যমীনে পড়বে। তারপর তুলনামূলক অধিক নিকটবর্তী অঙ্গ যমীনে রাখবে। আর সিজদা থেকে উঠার সময় যমীন থেকে শরীরের সবচেয়ে উপরের অঙ্গটি অন্যগুলোর আগে উঠবে। অতঃপর তার পরেরটি। সুতরাং মাথা যেহেতু যমীন থেকে সবচেয়ে উপরে তাই সবার আগে মাথা উঠবে, অতঃপর উভয় হাত, তারপর উভয় হাঁটু। এভাবে কাজ করলে উটের উঠা-বসার সাথে সাদৃশ্য হয়না। কেননা আমাদেরকে সলাতে বেশ কিছু পশুর সাথে সাদৃশ্য করতে নিষেধ করা হয়েছে। সিজদার যাওয়ার সময় প্রথমে যমীনে হাত রেখে উটের মত করে বসা, শিয়ালের মত ডানেবামে তাকানো, সিজদায় গিয়ে হিংস্র প্রাণীর ন্যায় সামনের দিকে দুই হাত ছড়িয়ে দেয়া, কুকুরের ন্যায় ‘ইকআ’ করা অর্থাৎ উভয় হাঁটু খাড়া রেখে নিতম্বের উপর বসা এবং কাকের ঠোকর মারার মত এবং সালাম ফিরানোর সময় উশৃঙ্খল ঘোড়ার লেজ নাড়ানোর ন্যায় হাত নাড়াতে নিষেধ করেছেন।[2]
নাবী (সাঃ) কপাল ও নাকের উপর সিজদাহ করতেন। পাগড়ির পেঁচের উপর সিজদাহ করার কথা সহীহ সূত্রে প্রমাণিত নয়। তিনি অধিকাংশ সময় মাটির উপর সিজদাহ করতেন। পানি ও কাঁদার উপর সিজদাহ করার কথাও বর্ণিত হয়েছে। খেজুর পাতার চাটাই, পাটি এবং শোধনকৃত চামড়ার উপরও তিনি সিজদাহ করতেন।
সিজদাহ করার সময় তিনি কপাল ও নাক যমীনে ভালভাবে লাগাতেন। বাহুদ্বয়কে পার্শ্বদেশ হতে এমনভাবে আলাদা করে রাখতেন যে, তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রতা দেখা যেত। সিজদাতে তিনি হস্তদ্বয়কে উভয় কাঁধ ও কান বরাবর রাখতেন এবং পিঠকে সোজা রাখতেন। উভয় পায়ের আঙ্গুলসমূহকে কিবলামুখী রাখতেন এবং উভয় হাতের তালু এবং আঙ্গুলসমূহকে ছড়িয়ে রাখতেন। আঙ্গুলসমূহের মাঝে বেশী ফাঁক রাখতেন না এবং একটিকে অন্যটির সাথে একেবারে মিলিয়েও রাখতেন না।[3] সিজদাতে তিনি এই দু’আ পড়তেন এবং পড়ার আদেশ করতেনঃ
سُبْحَانَ رَبِّىَ الْاَعْلٰى
‘‘আমি প্রশংসার সাথে মহান সুউচ্চ প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি’’।[4] কখনও এই দু’আটির সাথে পড়তেনঃ
سُبْحَانك اللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِك اللّٰهُمَّ اِغْفِرْ لِي
‘‘হে আল্লাহ! আমাদের প্রভু। তোমার প্রশংসার সহিত তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর’।[5] সিজদায় তিনি এই দু’আও পড়তেন-
سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ الْمَلاَئِكَةِ وَالرُّوحِ
‘‘ফিরেশতাকূল এবং জিবরীলের প্রতিপালক অতি পবিত্র।[6]
আবার কখনও তিনি বলতেন-
اللّٰهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِى لِلَّذِى خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ تَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ
‘‘হে আল্লাহ! তোমার জন্যই সিজদাহ করেছি’’। একমাত্র তোমার প্রতিই ঈমান এনেছি এবং তোমার কাছেই আত্মসমর্পন করেছি। আমার মুখমন্ডল ঐ সত্ত্বার জন্য সিজদাবনত হয়েছে, যিনি উহাকে সৃষ্টি করেছেন, সুসমন্বিত আকৃতি দিয়েছেন এবং তাতে কান ও চক্ষু স্থাপন করেছেন। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ কত কল্যাণময়![7]
সিজদায় তিনি এই দু’আটিও পাঠ করতেনঃ
اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِى ذَنْبِى كُلَّهُ دِقَّهُ وَجِلَّهُ وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ وَعَلاَنِيَتَهُ وَسِرَّهُ
‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার ছোট, বড়, পূর্বের, পরের, প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য সকল গুনাহ ক্ষমা করে দাও’’।[8]
তিনি সিজদায় আরও বলতেন-
اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِى خَطِيئَتِى وَجَهْلِى وَإِسْرَافِى فِى أَمْرِى وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّى اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِى جِدِّى وَهَزْلِى وَخَطَئِى وَعَمْدِى وَكُلُّ ذَلِكَ عِنْدِى اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِى مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ أَنْتَ إِلَهِيْ لاَ إِلَهَ أَنْتَ
‘‘হে আল্লাহ্! তুমি আমার অসতর্কতা বশত কৃত গুনাহ, অজ্ঞতা বশত অপরাধ, আমার কাজের ক্ষেত্রে সীমালংঘন এবং তুমি আমার ঐ সমস্ত অপরাধও ক্ষমা করে দাও যে সম্পর্কে তুমি আমার চেয়ে অধিক অবগত আছ। হে আল্লাহ্! তুমি আমার চেষ্টাপ্রসূত, হাসি-ঠাট্টা প্রসূত, ভুলবশত এবং ইচ্ছাকৃত সকল গুনাহ্ মা’ফ করে দাও। উপরোক্ত সকল প্রকার অপরাধই আমার মধ্যেই রয়েছে। হে আল্লাহ! আমার পূর্বের, পরের, প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দাও। তুমিই আমার একমাত্র উপাস্য। তুমি ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই’’।
সিজদার মধ্যে নাবী (সাঃ) বেশী বেশী দু’আ করার আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলতেন- আশা করা যায় যে, সিজদাবনত অবস্থায় তোমাদের দু’আ কবুল করা হবে।
Leave a Reply