জনাব আবুল হাসানাত মােহাম্মদ আবদুল হাই ১৯০১ সালে নােয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার অন্তর্গত চর ঈশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৌলবী আবদুল গনী বরিশাল সরকারী জেলা স্কুলের আরবী-ফার্সীর শিক্ষক এবং মেদিনীপুর (ভারত) সরকারী জেলা হাইস্কুলের হেড মৌলবী’ ছিলেন। বিদুষী মাতা আফীফা খাতুন স্থানীয় মক্তবে ধর্মশিক্ষা দিতেন।
জনাব আবুল হাসানাত মােহাম্মদ আবদুল হাই সাহেবের পিতা জনাব মৌলবী মােহাম্মদ আবদুল গনি (মরহুম মাগফুর) ছাহেব তৎকালে একজন বিখ্যাত আলেম ছিলেন। জনাব মৌলবী মােহাম্মদ আবদুল গনি (র) প্রথম জীবনে ফুরফুরা পীর ছাহেবের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। পরবর্তী কালে। তিনি বরিশাল জেলা স্কুলে ফার্সী ও আরবীর শিক্ষক নিযুক্ত হন। নােয়াখালীর উপকূল এলাকা মেঘনার ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় জনাব মৌঃ মােহাম্মদ আবদুল গনি (র) সপরিবারে হাতিয়ায় স্থানান্তরিত হয়ে তথায় চরঈশ্বর এলাকায় বসবাস করতে থাকেন। পরিবার স্থানান্তরের কারণে বিভিন্ন সমস্যায় জড়িত হয়ে তিনি বরিশাল জেলা স্কুলের চাকুরী হতে পদত্যাগ করেন। কিন্তু আর্থিক প্রয়ােজনে তিনি আবারও চাকুরীতে যেতে বাধ্য হন এবং মেদেনীপুর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতে থাকেন। শেষ জীবনে তিনি তাঁর বসতবাড়ী এলাকার জামে মসজিদে (তালুকদার মসজিদ) ইমামতী করতেন এবং সর্বদা ওয়াজ-নছিহত ও ফতওয়া-ফরায়েজ করতেন। ১৩৫৪ বাংলা সনের বৈশাখ মাসে ৭৩ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
জনাব মাওলানা আবদুল হাই ছাহেবের মাতা আফিফা খাতুন মরহুমা ছাহেবা বিখ্যাত আলেম জনাব মৌলবী কারী ফায়জুর রহমান ইবনে অলিয়ে কামেল হযরত পীর আবদুর রহমান (র) [মােতাওয়াক্কেল বিল্লাহ]-এর কন্যা। তিনি নােয়াখালীর প্রাচীন সদর এলাকার ধুমচর গ্রামে বসবাস করতেন। আফিফা খাতুন মরহুমা ছাহেবা চরঈশ্বর এলাকার। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েদের শিক্ষয়িত্রী ছিলেন। তিনি নিজ স্বামীর বাড়ীতে থেকে শিক্ষকতা করতেন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আফিফা খাতুন মরহুমা । ছাহেবা ফার্সী ও উর্দু ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। তাঁর পুত্র অত্র কিতাবের লেখক জনাব মাওলানা ছাহেব যখন কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত। ছিলেন তখন মরহুমা আফিফা খাতুন তার পুত্রের নিকট সর্বদা ফার্সী ভাষায় পত্র লিখতেন। আফিফা খাতুন মরহুমা ছাহেবা কোরআনে পাকের দা “তাফছীর-এ-হােসাইনী সদাসর্বদা তেলাওয়াত করতেন। ১৯২৫ ইং সনে আফিফা খাতুন ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
জনাব হযরত মাওলানা ছাহেব ছাত্র জীবনে একজন মেধা ছাত্র হিসাবে শিক্ষকমণ্ডলী ও সকলের নিকট সুপরিচিত ছিলেন। মওলানা আবদুল হাই ১৯২৮ সালে কলিকাতা মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্ব সহকারে কামিল পরীক্ষা পাস করেন। এরপর তিনি দেওবন্দ দারুল উলুম মাদ্রাসায় আরাে পড়াশােনা করেন।
শিক্ষাশেষে তিনি রামগতি থানায় নূরিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা ও হাতিয়ার আফাযিয়া মাদ্রাসায় ১০ বছর শিক্ষকতা করেন। এক সময় তিনি হাতিয়া-সন্দ্বীপ ও রামগতি থানার কাযীর দায়িত্বও পালন করেন।
এরই এক পর্যায়ে পীরে কামেল হাদীয়ে জামান হযরত মাওলানা হাফেজ আবদুর রব ছাহেব জৌনপুরী (র) জনাব মাওলানা ছাহেবকে তার আধ্যাতিত তত্ত্বে ডাক দেন এবং তার হাতে মুরীদ হয়ে জনাব মাওলানা ছাহেব তার প্রধান মুফতী হিসাবে দীর্ঘ চার বৎসর তার সাথে অবস্থান করেন।
দীর্ঘ চার বৎসর তাঁর সঙ্গে রেখে নিম্নলিখিত খেলাফতনামা দানে হেদায়েতের ভার অর্পণ করেন। খেলাফতনামার অবিকল বাংলা তর্জমা নিয়ে প্রদত্ত হল ঃ
“ফকিরের খলিফাগণের মধ্যে (হাতিয়া নিবাসী জনাব মাওলানা মােহাম্মদ আবদুল গনি সাহেবের সুযােগ্য পুত্র) প্রিয় ও প্রধানতম খলীফা মিঞা মাওলানা আবুল হাছানাত মােহাম্মদ আবদুল হাই ছাল্লামাহুকে হাদীস’, ‘তাফছীর’, ‘ফেকাহ’, ‘উছুল’, ‘বালাগাত’ ও ‘ছিয়ার’শাস্ত্রে পূর্ণ। শিক্ষিত ও সদ্বংশজাত ধীমান ও চরিত্রবান প্রাপ্ত হইয়া তাহাকে এই ফকিরের সহিত দীর্ঘকাল রাখিয়া বিভিন্ন জেকের-আজকার ‘মােরাকাবা – মােশাহাদা’ বিষয়ক যথেষ্ট শিক্ষা প্রদান করিয়াছি। খােদার ফজলে উক্ত প্রিয়তম মিঞা মারেফাত ও তরীকাত সম্বন্ধে উচ্চ শিক্ষা লাভ করত পূণ ফয়েজ প্রাপ্ত ও বিশেষভাবে অভিজ্ঞ এবং ফকির তাকে আন্তরিকভাবে ভালবাসে। অতএব উক্ত প্রিয়তমকে ওয়াজ-নছিহত, তাওবা, বয়াত ও জেকের আজকার শিক্ষা দেওয়া এবং মুরিদ করবার খাছ হুকুম ও ক্ষমতা প্রদান করত সর্বসাধারণ মুসলমান ভাইদের খেদমতে, বিশেষত চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর, শ্রীহট্ট, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল, পটুয়াখালী, নােয়াখালী ও বিভিন্ন দেশসমূহে প্রেরণ করলাম । সর্বসাধারণ মুসলমান ভাইদের নিকট, বিশেষত যাঁরা এই ফকিরের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা রাখেন, তাদের খেদমতে নিবেদন এই যে, উক্ত প্রিয়তমকেও আন্তরিক ভালবেসে তার ওয়াজ-নছিহত শুনবেন।”
ইতি, ফকীর মােহাম্মদ আবদুর রব জৌনপুরী, সন ১৩৪৫ বাংলা। محمد عبد الرب بن محمود بن على جونپوری .
সুফিয়ায়ে কেরামের সিলসিলায় তরীকায়ে নকশবন্দীয়া মােজাদ্দেদিয়ার শাজরানামায় তিনি নিম্নরূপে সম্পর্কিত। (প্রসিদ্ধ চার তরিকা : কাদেরীয়া, চিশতীয়া, নকশবন্দীয়া, মােজাদ্দেদীয়া এবং মােহাম্মদীয়া ও তার ঊর্ধ্বতন তরীকার মাের্শেদগণের বর্ণনা দেওয়া হল।)
আলহাজ্ব মাওলানা আবুল হাছানাত মােহাম্মদ আবদুল হাই ছাহেব (র), তাঁর পীর মাওলানা হাফেজ আবদুর রব ছাহেব জৌনপুরী (র), তাঁর পীর হযরত মাওলানা শাহ হাফেজ আহমদ ছাহেব জৌনপুরী (র), তাঁর পীর হযরত মাওলানা শাহ সুফী কারামাত আলী জৌনপুরী (র), তাঁর পীর হযরত সাইয়্যেদ আহমদ বেরলবী (র) এবং তাঁর উর্ধ্বতন পীরে তরীকত (এবং শাজরা নিম্নরূপ যা মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সঠিকভাবে পৌঁছেছে), হযরত মাওলানা শায়খ আবদুল আযীয (র), হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী (র), হযরত শায়খ আবদুর রহীম (র), হযরত শায়খ আবদুল্লাহ আকবরাবাদী (র), হযরত সাইয়্যেদ আদম বিন্নরী (র), হযরত শায়খ আহমদ সরহেন্দী মােজাদ্দেদে আলফেসানী (র), হযরত খাজা মােহাম্মদ বাকীবিল্লাহ (র), হযরত খাজা আমকানকী (র), হযরত মাওলানা দরবেশ মােহাম্মদ (র), হযরত মাওলানা যাহেদ (র), হযরত খাজা ওবায়দুল্লাহ আহরার (র), ইয়াকব চরখী (র), হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দী (র), হযরত সাম্মাসী (র), হযরত খাজা আলী রামিনী (র), হযরত খাজা মাহমুদুল খায়ের (র), হযরত খাজা আরেফ রেগওরী (র), হযরত খাজা আবদুল খালেক গেজদাওয়ানী (র), হযরত খাজা ইউসুফ হামদানী (র), খাজা শায়খ আবু আলী ফারমাদী (র), হযরত ইমাম আবুল কাশেম কোশাইরী (র), হযরত আবু আলী দাক্কাক (র), হযরত শায়খ আবুল কাসেম, (র), হযরত শায়খ আবু বকর শিবলী (র), হযরত সাইয়েদুত তায়েফা জুনায়েদ বাগদাদী (র), হযরত শায়খ আবুল হাসান সিরীসাকতী (র), হযরত মা’রুফ কারখী (র), হযরত ইমাম আলী রেজা (র), হযরত ইমাম মুসা ক (র), হযরত ইমাম জাফর সাদেক (র), রায়ীছুল ফোকাহা ওয়াত্তাবেয়ীন কাসেম ইবনে মােহাম্মদ (র), হযরত সালমান ফারসী (রা), সাহাবায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমীরুল মুমেনীন সাইয়্যেদুল মুসলেমীন আফযালুল খুলাফায় রাশেদীন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা)।
ছাত্র জীবনেই মওলানা আবদুল হাই বংগীয় স্টুডেন্টস্-মুসলিম লীগের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্যরূপেও কাজ করেন। দীর্ঘদিন হেদায়াতের কাজে লিপ্ত থাকাকালীন এক পর্যায়ে পাক-ভারত বাংলা উপমহাদেশের বিখ্যাত নেতৃবৃন্দ মরহুম শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক ছাহেব, হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী ছাহেব, খাজা নাজিমুদ্দীন ছাহেব প্রমুখের একান্ত অনুরােধে জনাব মাওলানা ছাহেব তৎকালীন ভারতবর্ষে মুসলিম। গণজাগরণ আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন। পর্যায়ক্রমে ১৯৪৬ সনে তিনি (জনাব মাওলানা ছাহেব) হাতিয়া ও সন্দ্বীপ এলাকা হতে তৎকালীন অবিভক্ত বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
অন্যান্য মুসলিম লীগ নেতার ন্যায় মওলানা ভাবতেন, বৃটিশ সরকারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ব্যতীত মুসলমান জাতির স্বার্থরক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই ২য় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-৪৫ খৃ.) চলাকালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস যখন বৃটিশ সরকারকে পর্যুদস্ত করার কাজে লিপ্ত ছিল, তখন তিনি মুসলিম লীগের নীতি অনুযায়ী মুসলমানদেরকে বৃটিশ শাসনের প্রতি অনুগত ও সহানুভূতিশীল রাখার চেষ্টা করেন। এ জন্য নােয়াখালী জেলার তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. আর. এ. ডাচ্ ও চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার মি. ও এম. মার্টিন তার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং হাতিয়ায় কিছু জমিও তাঁকে প্রদান করেন।
১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে মওলানা আবদুল হাই মুসলিম লীগের মনােনীত প্রার্থীরূপে নােয়াখালী জেলা বাের্ডের প্রেসিডেন্ট আবদুল মজীদ বি.এ.-কে বিপুল ভােটে পরাজিত করে নােয়াখালী-দক্ষিণ এলাকা থেকে বংগীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে মওলানা আবদুল হাই যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী এ্যাডভােকেট মােস্তাফিজুর রহমানকে বিপুলভােটে পরাজিত করে মুসলিম লীগের টিকেটে পূর্ববংগীয় প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ঐ নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি হয়েছিল। পূর্ব বাংলার ৩০০ আসনের মধ্যে মুসলিম লীগ লাভ করে মাত্র ১০টি। এর মধ্যে মওলানা পেয়েছিলেন একটি। এতেই প্রতীয়মান হয় যে, তিনি কত বেশী জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। ১৯৫৪ সালে তিনি পূর্ববংগীয় মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ক্ষমতা দখলের রাজনীতি বা দল বদলের রাজনীতি তিনি করেন নি। মুসলিম লীগের ঘাের দুর্দিনেও তিনি দল ত্যাগ করেননি। তার বিশ্বাস ছিল, মুসলিম লীগের রাজনীতিই দেশের সংহতি ও মুসলমানদের কল্যাণ বয়ে আনবে। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি করা পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন।
১৯৬৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি নােয়াখালী থেকে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরিষদের ১ম অধিবেশনেই তাঁকে মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারী বাের্ডের চীফ হুইপ নির্বাচিত করা হয়। একই সময় তাঁকে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রলালয়ের পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি পদেও নিয়ােজিত করা হয়। ১৯৬৩ সালে মওলানা আবদুল হাই ইসলামিক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। ঐ কমিটির উদ্দেশ্য ছিল, মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে ইসলামী আদর্শ অনুসরণের প্রায়ােগিক দিকগুলাে খুঁজে বের করা এবং বিদ্যমান ইসলামী আইন-কানুনের খুঁটিনাটি ব্যাখা-বিশ্লেষণ করে সেগুলােকে যুগােপযােগী করে তােলার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাবাকারে সুপারিশ করা। মুসলিম পারিবারিক আইন প্রণয়ন
কমিটিরও (১৯৬২ খৃ.) তিনি সদস্য ছিলেন।
১৯৫৫ সালে মক্কা মুকাররামাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব মুসলিম সম্মিলনে মওলানা আবদুল হাই পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেই সময় তিনি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ জর্দান, সিরিয়া, ইরাক, বাহরাইন, লেবানন, মিসর ইত্যাদি দেশ সফর করেন।
তিনিই একমাত্র ভাগ্যবান রাজনীতিক, যিনি ১৯৬২ সালে বাগদাদ ও আলকিন্দী নগরীর সহস্রতম বার্ষিকী উদযাপন-অনুষ্ঠানে যােগদানের জন্য পাকিস্তান থেকে ইরাক সরকার কর্তৃক একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ধর্মীয় নেতা হিসাবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।
মওলানা আবদুল হাই একজন সুলেখকও ছিলেন। ইসলামী কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও ধর্ম-দর্শন বিষয়ে লিখিত তার কয়েকটি বাংলা পুস্তক-পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। তিনি গ্রামের নিজ বাড়িতে ১৯৪৬ সালে দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা’ নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর সহযােগিতায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয় ।
তিনি আফাযিয়া হাইস্কুল ও হাতিয়া মডেল হাইস্কুলের পরিচালক পরিষদের সভাপতি ছিলেন। মওলানা আবদুল হাই আল্লাহভীরু লােক ছিলেন। তিনি মওলানা আবদুর রব জৌনপুরীর মুরীদ ও খলীফা ছিলেন। মওলানা জৌনপুরীর সাহচর্যে তিনি কিছুকাল বাংলা-আসামে ধর্মপ্রচারের কাজেও আত্মনিয়ােগ করেছিলেন। ইসলামী আদর্শে পাকিস্তান রাষ্ট্র পরিচালিত হােক এটাই ছিল তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা চেতনার কেন্দ্রবিন্দু। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে ইসলামের ভিত্তি ও ইসলামের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। জীবনের শেষদিকে কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগের আদর্শচ্যুতি ও ক্ষমতার লােভ লক্ষ্য করে তিনি ১৯৬৮ সালে রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন । জনাব হযরত মাওলানা আবদুল হাই ছাহেব (র) জীবনে তিনবার হজ্ব করেন। এই মহান মনীষী ১৯৮৩ সালের ২৯ নভেম্বর মঙ্গলবার ফজরের নামাযের আযান চলাকালে ঢাকায় একটি হাসপাতালে ইনতিকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আরবী, উর্দু, ফার্সী, বাংলা বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যে তার যথেষ্ট অবদান ছিল। তাঁর রচিত (১) অজিফা ভাণ্ডার, (২) মাের্শেদ চরিত্র, (৩) তাজকেরায়ে কারামাতিয়া, (৪) মৌলুদ ও কেয়াম সমস্যা, (৫) ওয়াজ রত্ন, (৬) মাের্শেদ ভক্তি ও (৭) মুসলিম জাতির কল্যাণ বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।
জনাব হযরত মাওলানা ছাহেব এই দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। হাতিয়া থানাধীন চরঈশ্বর দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসার তিনিই প্রতিষ্ঠাতা।। তাঁর অন্তিম ইচ্ছা অনুসারে তাঁকে হাতিয়ার নিজ বাড়ীর সম্মুখস্থ জামে মসজিদের পার্শ্বে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় এবং সেই সময় আত্মীয়-স্বজন ও ওলামায়ে কেরামের এবং নামাযে জানাযায় অংশ গ্রহণকারিগণের উপস্থিতিতে তাঁর দ্বিতীয় পুত্র আবু নঈম মােহাম্মদ আবদুল আলীমকে (মহুরুম) তাঁর খেলাফত অর্পণ করার কথা ঘােষণা করা হয়।।
Leave a Reply