Contents
প্রথমেই যেনে নেই সাহু সিজদা (Prostration of Forgetfulness) সঙ্ক্রান্ত সহিহ হাদিস সমূহ
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ) / অধ্যায়ঃ ২২/ সাহু সিজদা (كتاب السهو)
পরিচ্ছদঃ ২২/১. ফারয সলাতে দু’রাক‘আতের পর দাঁড়িয়ে গেলে সাজদাহ্য়ে সাহ্উ প্রসঙ্গে।
১২২৪. ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু বুহায়নাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সালাতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’রাক‘আত আদায় করে না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুসল্লীগণ তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। যখন তাঁর সালাত সমাপ্ত করার সময় হলো এবং আমরা তাঁর সালাম ফিরানোর অপেক্ষা করছিলাম, তখন তিনি সালাম ফিরানোর পূর্বে তাক্বীর বলে বসে বসেই দু’টি সাজদাহ্ করলেন। অতঃপর সালাম ফিরালেন। (৮২৯; মুসলিম ৫/১৯, হাঃ ৫৭০, আহমাদ ২২৯৮১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৫১)
পরিচ্ছদঃ ২২/১. ফারয সলাতে দু’রাক‘আতের পর দাঁড়িয়ে গেলে সাজদাহ্য়ে সাহ্উ প্রসঙ্গে।
১২২৫. ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু বুহাইনাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের দু’রাক‘আত আদায় করে দাঁড়িয়ে গেলেন। দু‘রাক‘আতের পর তিনি বসলেন না। সালাত শেষ হয়ে গেলে তিনি দু’টি সাজদাহ্ করলেন এবং অতঃপর সালাম ফিরালেন। (৮২৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৫২)
পরিচ্ছদঃ ২২/২. ভুল বশতঃ সলাত পাঁচ রাক‘আত আদায় করলে।
১২২৬. ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত পাঁচ রাক‘আত আদায় করলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, সালাত কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেন, এ প্রশ্ন কেন? (প্রশ্নকারী) বললেন, আপনি তো পাঁচ রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন। অতএব তিনি সালাম ফিরানোর পর দু’টি সাজদাহ্ করলেন। (৪০১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৫৩)
পরিচ্ছদঃ ২২/৩. দ্বিতীয় বা তৃতীয় রাক‘আতে সালাম ফিরিয়ে নিলে সলাতের সাজদাহর মত বা তার চেয়ে দীর্ঘ দু’টি সাজদাহ্ করা।
১২২৭. আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে যুহর বা আসরের সালাত আদায় করলেন এবং সালাম ফিরালেন। তখন যুল-ইয়াদাইন (রাযি.) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া আল্লাহর রাসূল! সালাত কি কম হয়ে গেল? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেন, সে যা বলছে, তা কি ঠিক? তাঁরা বললেন, হাঁ। তখন তিনি আরও দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। পরে দু’টি সাজদাহ্ করলেন। সা‘দ (রহ.) বলেন, আমি ‘উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহ.)-কে দেখেছি, তিনি মাগরিবের দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন এবং কথা বললেন। পরে অবশিষ্ট সালাত আদায় করে দু’টি সাজ্দাহ্ করলেন এবং বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রকম করেছেন। (৪৮২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৫৪)
পরিচ্ছদঃ ২২/৪. সাজদাহ্ সাহ্উর পর তাশাহ্হুদ না পড়লে।
وَسَلَّمَ أَنَسٌ وَالْحَسَنُ وَلَمْ يَتَشَهَّدَا وَقَالَ قَتَادَةُ لاَ يَتَشَهَّدُ.
আনাস (রাযি.) ও হাসান (বাসরী) (রহ.) সালাম ফিরিয়েছেন। কিন্তু তাশাহ্হুদ পড়েননি। কাতাদাহ্ (রহ.) বলেছেন, তাশাহ্হুদ পড়বে না।
১২২৮. আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ রাক‘আত আদায় করে সালাত শেষ করলেন। যুল-ইয়াদাইন (রাযি.) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সালাত কি কম করে দেয়া হয়েছে, না কি আপনি ভুলে গেছেন? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, যুল-ইয়াদাইন কি সত্য বলেছে? মুসল্লীগণ বললেন, হাঁ। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে আরও দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি সালাম ফিরালেন এবং তাক্বীর বললেন, পরে সাজদাহ করলেন, স্বাভাবিক সাজদাহর মতো বা তার চেয়ে দীর্ঘ। অতঃপর তিনি মাথা তুললেন। (৪৮২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৫৫)
সালামাহ ইবনু ‘আলক্বামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুহাম্মাদ (ইবনু সীরীন) (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, সাজদাহ্ সাহ্উর পর তাশাহ্হুদ আছে কি? তিনি বললেন, আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.)-এর হাদীসে তা নেই। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৫৬)
পরিচ্ছদঃ ২২/৫. সাজদাহ্য়ে সাহ্উতে তাকবীর বলা।
১২২৯. আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিকালের কোন এক সালাত দু’ রাক‘আত আদায় করে সালাম ফিরালেন। মুহাম্মাদ (রহ.) বলেন, আমার প্রবল ধারণা, তা ছিল আসরের সালাত। অতঃপর মসজিদের একটি কাষ্ঠ খন্ডের নিকট গিয়ে দাঁড়ালেন এবং তার উপর হাত রাখলেন। মুসল্লীগণের ভিতরে সামনের দিকে আবূ বাকর (রাযি.) ও ‘উমার (রাযি.)ও ছিলেন। তাঁরা উভয়ে তাঁর সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। তাড়াহুড়াকারী মুসল্লীগণ বেরিয়ে পড়লেন। তাঁরা বলাবলি করতে লাগলেন, সালাত কি কমিয়ে দেয়া হয়েছে? কিন্তু এক ব্যক্তি, যাঁকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যূল ইয়াদাইন বলে ডাকতেন, জিজ্ঞেস করল আপনি কি ভুলে গেছেন, না কি সালাত কমিয়ে দেয়া হয়েছে? তিনি বললেনঃ আমি ভুলিনি আর সালাতও কম করা হয়নি। তখন তাকে বলা হল যে, আপনি ভুলে গেছেন। তখন তিনি দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। অতঃপর তাক্বীর বলে সাজ্দাহ্ করলেন, স্বাভাবিক সাজদাহর ন্যায় বা তার চেয়ে দীর্ঘ। অতঃপর মাথা উঠিয়ে আবার তাক্বীর বলে মাথা রাখলেন অর্থাৎ তাক্বীর বলে সাজদাহ্য় গিয়ে স্বাভাবিক সাজদাহর মত অথবা তার চেয়ে দীর্ঘ সাজদাহ্ করলেন। অতঃপর মাথা উঠিয়ে তাক্বীর বললেন। (৪৮২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৫৭)
পরিচ্ছদঃ ২২/৫. সাজদাহ্য়ে সাহ্উতে তাকবীর বলা।
১২৩০. ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু বুহাইনাহ আসাদী (রাযি.) যিনি বানূ ‘আবদুল মুত্তালিবের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তিবদ্ধ ছিলেন তাঁর হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাতে (দু’রাক‘আত আদায় করার পর) না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। সালাত পূর্ণ করার পর সালাম ফিরাবার পূর্বে তিনি বসা অবস্থায় ভুলে যাওয়া বৈঠকের স্থলে দু’টি সাজদাহ্ সম্পূর্ণ করলেন, প্রতি সাজদাহ্য় তাক্বীর বললেন। মুসল্লীগণও তাঁর সঙ্গে এ দু’টি সাজদাহ্ করল। (৮২৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৫৮)
ইবনু শিহাব (রহ.) হতে তাক্বীরের কথা বর্ণনায় ইবনু জুরাইজ (রহ.) লায়স (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন।
পরিচ্ছদঃ ২২/৬. সলাত তিন রাক‘আত আদায় করা হল না কি চার রাক‘আত, তা মনে করতে না পারলে বসা অবস্থায় দু’টি সাজদাহ্ করা।
১২৩১. আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন সালাতের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পালায় যাতে আযান শুনতে না পায় আর তার পশ্চাদ-বায়ু সশব্দে নির্গত হতে থাকে। আযান শেষ হয়ে গেলে সে এগিয়ে আসে। আবার সালাতের জন্য ইক্বামাত দেওয়া হলে সে পিঠ ফিরিয়ে পালায়। ইক্বামাত শেষ হয়ে গেলে আবার ফিরে আসে। এমনকি সে সালাত আদায়রত ব্যক্তির মনে ওয়াস্ওয়াসা সৃষ্টি করে এবং বলতে থাকে, অমুক অমুক বিষয় স্মরণ কর, যা তার স্মরণে ছিল না। এভাবে সে ব্যক্তি কত রাক‘আত সালাত আদায় করেছে তা স্মরণ করতে পারে না। তাই, তোমাদের কেউ তিন রাক‘আত বা চার রাক‘আত সালাত আদায় করেছে, তা মনে রাখতে না পারলে বসা অবস্থায় দু’টি সাজদাহ্ করবে। (৬০৮; মুসলিম ৪/৮, হাঃ ৩৮৯, আহমাদ ৯৯৩৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৫৯)
পরিচ্ছদঃ ২২/৭. ফারয ও নাফল সলাতে ভুল হলে।
১২৩২. আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ালে শয়তান এসে তাকে সন্দেহে ফেলে, এমনকি সে বুঝতে পারে না যে, সে কত রাক‘আত সালাত আদায় করেছে। তোমাদের কারো এ অবস্থা হলে সে যেন বসা অবস্থায় দু’টি সাজদাহ্ করে। (৬০৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৬০)
পরিচ্ছদঃ ২২/৮. সলাতে থাকা অবস্থায় কেউ তার সঙ্গে কথা বললে এবং তা শুনে যদি সে হাত দিয়ে ইশারা করে।
১২৩৩. কুরায়ব (রহ.) হতে বর্ণিত। ইবনু ‘আববাস, মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ এবং ‘আবদুর রহমান ইবনু আযহার (রাযি.) তাঁকে ‘আয়িশাহ্ (রাযি.)-এর নিকট পাঠালেন এবং বলে দিলেন, তাঁকে আমাদের সকলের তরফ হতে সালাম পৌঁছিয়ে আসরের পরের দু’রাক‘আত সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। তাঁকে একথাও বলবে যে, আমরা খবর পেয়েছি যে, আপনি সে দু’রাক‘আত আদায় করেন, অথচ আমাদের নিকট পৌঁছেছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দু’রাক‘আত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। ইবনু ‘আববাস (রাযি.) সংবাদে আরও বললেন যে, আমি ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাযি.)-এর সাথে এ সালাতের কারণে লোকদের মারধোর করতাম। কুরায়ব (রহ.) বলেন, আমি ‘আয়িশাহ্ (রাযি.)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে তাঁদের পয়গাম পৌঁছিয়ে দিলাম। তিনি বললেন, উম্মু সালামাহ্ (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস কর। [কুরায়ব (রহ.) বলেন] আমি সেখান হতে বের হয়ে তাঁদের নিকট গেলাম এবং তাঁদেরকে ‘আয়িশাহ্ (রাযি.)-এর কথা জানালাম। তখন তাঁরা আমাকে ‘আয়িশাহ্ (রাযি.)-এর নিকট যে বিষয় নিয়ে পাঠিয়েছিলেন, তা নিয়ে পুনরায় উম্মু সালামাহ (রাযি.)-এর নিকট পাঠালেন। উম্মু সালামাহ্ (রাযি.) বললেন, আমিও নাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তা নিষেধ করতে শুনেছি। অথচ অতঃপর তাঁকে আসরের সালাতের পর তা আদায় করতেও দেখেছি। একদা তিনি ‘আসরের সালাতের পর আমার ঘরে আসলেন। তখন আমার নিকট বনূ হারাম গোত্রের আনসারী কয়েকজন মহিলা উপস্থিত ছিলেন। আমি বাঁদীকে এ বলে তাঁর নিকট পাঠালাম যে, তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে বলবে, উম্মে সালামাহ (রাযি.) আপনার নিকট জানতে চেয়েছেন, আপনাকে (‘আসরের পর সালাতের) দু’রাক‘আত নিষেধ করতে শুনেছি; অথচ দেখছি, আপনি তা আদায় করছেন? যদি তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করেন, তাহলে পিছনে সরে থাকবে, বাঁদী তা-ই করল। তিনি ইঙ্গিত করলেন, সে পিছনে সরে থাকল। সালাত শেষ করে তিনি বললেন, হে আবূ উমায়্যার কন্যা! ‘আসরের পরের দু’রাক‘আত সালাত সম্পর্কে তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করেছ। আবদুল কায়স গোত্রের কিছু লোক আমার নিকট এসেছিল। তাদের কারণে যুহরের পরের দু’রাকা‘আত আদায় করতে না পেরে (তাদেরকে নিয়ে) ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। এ দু’রাক‘আত সে দু’রাক‘আত।* (৪৩৭০; মুসলিম ৬/৫৪, হাঃ ৭৩৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৬১)
পরিচ্ছদঃ ২২/৯. সলাতের মধ্যে ইঙ্গিত করা।
قَالَهُ كُرَيْبٌ عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم.
কুরাইব (রহ.) উম্মু সালামাহ্ (রাযি.) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এ সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন।
১২৩৪. সাহল ইবনু সা‘দ সা‘ঈদী (রাযি.) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সংবাদ পৌঁছে যে, বানূ আমর ইবনু আওফ-এ কিছু ঘটেছে। তাদের মধ্যে আপোষ করে দেয়ার উদ্দেশে তিনি কয়েকজন সহাবীসহ বেরিয়ে গেলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইতোমধ্যে সালাতের সময় হয়ে গেল। বিলাল (রাযি.) আবূ বাকর (রাযি.)-এর নিকট এসে বললেন, হে আবূ বাকর! আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে সালাতের সময় হয়ে গেছে, আপনি কি সালাতে লোকদের ইমামাত করতে প্রস্তুত আছেন? তিনি বললেন, হাঁ, যদি তুমি চাও। তখন বিলাল (রাযি.) ইক্বামাত বললেন এবং আবূ বাকর (রাযি.) সামনে এগিয়ে গিয়ে লোকদের জন্য তাক্বীর বললেন। এদিকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন এবং কাতারের ভিতর দিয়ে হেঁটে (প্রথম) কাতারে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুসল্লীগণ তখন হাততালি দিতে লাগলেন। আবূ বাকর (রাযি.)-এর অভ্যাস ছিল যে, সালাতে এদিক সেদিক তাকাতেন না। মুসল্লীগণ যখন অধিক পরিমাণে হাততালি দিতে লাগলেন, তখন তিনি সেদিকে তাকালেন এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে পেলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ইঙ্গিত করে সালাত আদায় করতে থাকার নির্দেশ দিলেন। আবূ বাকর (রাযি.) দু’হাত তুলে আল্লাহর হামদ বর্ণনা করলেন এবং পিছনের দিকে সরে গিয়ে কাতারে দাঁড়ালেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে এগিয়ে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে মুসল্লীগণের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, হে লোক সকল! তোমাদের কী হয়েছে, সালাতে কোন ব্যাপার ঘটলে তোমরা হাততালি দিতে থাক কেন? হাততালি তো মেয়েদের জন্য। কারো সালাতের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে সে যেন ‘সুবহানাল্লাহ্’ বলে। কারণ, কেউ অন্যকে ‘সুবহানাল্লাহ্’ বলতে শুনলে অবশ্যই সেদিকে লক্ষ্য করবে। অতঃপর তিনি বললেন, হে আবূ বাকর! তোমাকে আমি ইঙ্গিত করা সত্ত্বেও কিসে তোমাকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে বাধা দিল? আবূ বাকর (রাযি.) বললেন, কুহাফার ছেলের জন্য এ সমীচীন নয় যে, সে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সম্মুখে দন্ডায়মান হয়ে সালাত আদায় করবে। (৬৮৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৬২)
পরিচ্ছদঃ ২২/৯. সলাতের মধ্যে ইঙ্গিত করা।
১২৩৫. আসমা (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ্ (রাযি.)-এর নিকট গেলাম, তখন তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন, আর লোকেরাও সালাতে দাঁড়ানো ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, লোকদের অবস্থা কী? তখন তিনি তাঁর মাথা দ্বারা আকাশের দিকে ইঙ্গিত করলেন। আমি বললাম, এটা কি নিদর্শন? তিনি আবার তাঁর মাথার ইঙ্গিতে বললেন, হাঁ। (৮৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৬৩)
পরিচ্ছদঃ ২২/৯. সলাতের মধ্যে ইঙ্গিত করা।
১২৩৬. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অসুস্থ অবস্থায় তাঁর ঘরে বসে সালাত আদায় করছিলেন। একদল সহাবী তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে লাগলেন। তিনি তাঁদের প্রতি ইঙ্গিত করলেন, বসে যাও। সালাত শেষ করে তিনি বললেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে তাকে অনুসরণ করার জন্য। কাজেই তিনি রুকূ‘ করলে তোমরা রুকূ‘ করবে; আর তিনি মাথা উঠালে তোমরাও মাথা উঠাবে। (৬৮৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৬৪)
যে সকল কারণে সাহু সিজদা দিতে হয় তাহল,
- নামাজের মধ্যে কোন ফরজ বা ওয়াজিব আদায়ে বিলম্ব হলে।
- কোন ফরজ দুইবার আদায় হলে।
- নামাজের মধ্যে কোন ফরজ আগ-পর করে ফেললে।
- কোন একটি বা কয়েকটি ওয়াজিব বাদ পড়লে।
- কোন ওয়াজিব পরিবর্তন করলে। (নাজমুল ফাতাওয়া ২/৪৫৪)
সাহু সিজদা করার উত্তম পদ্ধতি হল, শেষ রাকআতে তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু…) পড়ে ডান দিকে সালাম ফিরাবে, তারপর নিয়ম মত দুটো সিজদা করে আবার তাশাহহুদ, দরূদ ও দুআয়ে মাছুরা পড়ে উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবে। হাদিস শরিফে এসেছে,
عن علقمة: أن عبد الله سجد سجدتي السهو بعد السلام، وذكر أن النبي ﷺ فعله
আলকামা থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. সাহু সিজদা সালামের পরে করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন, নবী ﷺ এরূপ করেছেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪৪৭৫)
জিজ্ঞাসা : একদিন জামাতে নামায একটু লেট হয়ে গিয়েছিল। ৪র্থ রাকাতে ইমাম সাহেব সালাম ফিরালো। তো স্বাভাবিক আমি সালাম ফিরাইনি কেননা আমি সম্পূর্ন জামাত পাই নি। কিন্তু পরে দেখলাম ইমাম সাহেব সিজদাতে চলে গেলো মানে সেটা সিজদাহে সাহু ছিল! যদিও আমি ১ম সালাম ফিরাইনি তাও আমি সিজদাহে সাহু দিলাম। তারপর যথারীতি ইমাম সাহেবের পুনরায় সালাম ফিরানোর পর বাকি নামায শেষ করলাম। এটা কি ঠিক ছিল! ভবিষ্যতে কখনো এরকম হলে কি আমারও আবার সিজদাহে সাহু দিতে হবে নাকি দেয়া লাগবে না?
উত্তর: আপনি যা করেছেন, ঠিক করেছেন। কেননা, আপনি মাসবুক হয়েছেন। আর ইমাম যদি সাহু সিজদা করে তাহলে মাসবুকব্যক্তিও ইমামের সাথে শুধু সাহু সিজদা করবে, তবে সাহু সিজদার জন্য যে সালাম দেয়া হয় সে সালাম ফিরাবে না।
মাজমাউল আনহুর ( ১/১৪৯) নামক কিতাবে আছে,
والمسبوق يسجد مع إمامه تبعا له ولا يسلم মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সাথে সাহু সিজদা করবে। কেননা, সে ইমামের অনুসারী। এবং সে ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে না।
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফাতওয়ার কিতাব ফাতওয়ায়ে শামীতে (২/৫৪৬) আছে,
والمسبوق يسجد مع امامه) قيد باسجود لانه لا يتابعه فى السلام بل يسجد معه ويتشهد فاذا سلم الامام قام الى القضاء
অর্থাৎ, মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সাথে সাহু সিজদা করবে। সিজদার সাথে এ জন্য মুকাইয়াদ করছে যে, মুক্তাদী ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে না। বরং তার সাথে শুধু সিজদা করবে। এবং তাসাহহুদ পড়বে। যখন ইমাম সাহেব সালাম দিবে তখন তার বাকি নামায পড়তে দাঁড়িয়ে যাবে।
জিজ্ঞাসা : নামাজের ভিতরে যদি কিরাত পড়ার সময় মাঝখানে একটা আয়াত মিসিং হয়ে যায় তাহলে কি নামাজ বাতিল হয়ে যাবে নাকি সাহু সিজদা দিলেই নামাজ হয়ে যাবে?
উত্তর: কোনো আয়াত মিসিং হয়ে গেলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। তবে এর কারণে তিন বার সুবহানাল্লাহ বলা যায় পরিমাণ সময় চুপ থাকলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। (তাহতাবী ২৫৮; আপ কে মাসায়েল ৪/৫৭)
মুক্তাদির ভুলের কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় কি?
জিজ্ঞাসা : চার রাকাত নামাযের ক্ষেত্র প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়াতু এবং দরুদের কিছু অংশ পড়া হয় এবং সেটা যদি জামায়াতের সাথে হয় তাহলে কি করতে হবে?
উত্তর: এই ভুলটির কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়।(ফাতহুলকাদীর ১/৫২৩) কিন্তু ভুলটি যদি ইমামের সঙ্গে নামায আদায়রত অবস্থায় কোনো মুক্তাদির হয় তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়না। বরং নামায হয়ে যায়। কেননা মুক্তাদির ভুলের কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। উল্লেখ্য, খুশুখুযু ও একাগ্রতার সাথে নামায আদায়ের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিত। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৪৫৬০; কিতাবুল আসল ১/১৯৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২০; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬৪)
মাসবুকব্যক্তি ইমামের সাথে সাহু সিজদা করবে কিনা?
জিজ্ঞাসা: মাসবুকব্যক্তি নামাজে শরীক হওয়ার পূর্বে যদি ইমাম সাহেবের সিজদাহ সাহু ওয়াজিব হয় তাহলে মাসবুক ব্যক্তি কি ইমাম সাহেবের সাথে সিজদাহ-সাহু আদায় করবে, না কি করবে না?
উত্তর: মাসবুকব্যক্তি ইমামের সাথে শুধু সাহু সিজদা করবে, তবে সাহু সিজদার জন্য যে সালাম দেয়া হয় সে সালাম ফিরাবে না।
মাজমাউল আনহুর নামক কিতাবে আছে।
والمسبوق يسجد مع إمامه تبعا له ولا يسلم
অর্থ, মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সাথে সাহু সিজদা করবে। কেননা, সে ইমামের অনুসারী । এবং সে ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে না।
মাজমাউল আনহুর: ১/১৪৯
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফাতওয়ার কিতাব ফাতওয়ায়ে শামীতে আছে।
والمسبوق يسجد مع امامه) قيد باسجود لانه لا يتابعه فى السلام بل يسجد معه ويتشهد فاذا سلم الامام قام الى القضاء (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب سجود السهو-2/546
অর্থাৎ, মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সাথে সাহু সিজদা করবে। সিজদার সাথে এ জন্য মুকাইয়াদ করছে যে, মুক্তাদী ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে না। বরং তার সাথে শুধু সিজদা করবে। এবং তাসাহহুদ পড়বে। যখন ইমাম সাহেব সালাম দিবে তখন তার বাকি নামায পড়তে দাড়িয়ে যাবে।
(ফাতওয়ায়ে শামী: ২/৫৪৬, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী: ১/৯১
মাসবূক-ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর দুরুদ পড়া
জিজ্ঞাসা: জামাতে নামাজের মাঝে যোগ দিয়ে শেষ বৈঠকে যদি ভুলে তাশাহুদের পর দরুদ শরীফ পড়ে ফেলি তাহলে কি সিজদা সাহু দিতে হবে?
উত্তর: মাসবূক ব্যক্তির জন্য মুস্তাহাব হল, ইমামের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ এমনভাবে ধীরে ধীরে পড়বে, যাতে তার তাশাহহুদ পড়া শেষ হলে ইমামের সালাম ফিরানোর সময় হয়ে যায়। যদি ইমামের সালাম ফিরানোর আগে তার তাশাহহুদ পড়া শেষ হয়ে যায় তাহলে সে পুনরায় তাশাহহুদ পড়া শুরু করবে অথবা চুপ থাকবে। তার জন্য দুরুদ ও দোয়া ইত্যাদি পড়া জরুরি নয়। তবে যদি পড়ে ফেলে তাহলে এর জন্য নামাজের কোন ক্ষতি হয় না বিধায় এর জন্য তাকে সাহু সিজদা দিতে হয় না। (তাতারখানিয়া ২/১৯৭, ১৯৮)
উল্লেখ্য, যে ইমামের পিছনে এক বা একাধিক রাকাত পায় নি তাকে মাসবূক বলে।
সুন্নত নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতে ফাতিহার পর অন্য সূরা না পড়ে রুকুতে চলে গেলে করণীয়
জিজ্ঞাসা: চার রাকাত সুন্নত নামাযের তৃতীয় অথবা চতুর্থ রাকাতে সুরা ফাতিহার পর অন্য সুরা না পড়ে যদি রুকুতে চলে যাই সেক্ষেত্রে করণীয় কি?
উত্তর: সুন্নতের ক্ষেত্রে প্রত্যেক দুই রাকাত স্বতন্ত্র নামায। এজন্য প্রথম দুই রাকাতের মত পরের দুই রাকাতেও সূরা ফাতিহার সাথে অন্য যেকোনো সূরা মিলানো ওয়াজিব। এই ওয়াজিব তরক করে রুকুতে চলে গেলে সাহু সিজদা দিতে হবে। অন্যথায় নামায আদায় হবে না। (ফাতাওয়া কাসিমিয়া ৭/১৯৪)
চার রাকাত-বিশিষ্ট নামাযে প্রথম বৈঠক করতে ভুলে গেলে করণীয়
জিজ্ঞাসা: চার রাকাতের নামাজে দুই রাকাত বসতে ভুলে গেলে বা সন্দেহ হলে কি করা উচিত?
উত্তর: চার রাকাত-বিশিষ্ট নামাযে দুই রাকাতের সময় বসা ওয়াজিব। কেউ ভুলে উক্ত প্রথম বৈঠক না করে দাঁড়িয়ে গেলে কিংবা প্রথম বৈঠক করেনি মর্মে প্রবল ধারণা হলে; এ কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। সাহু সিজদা দিলে নামায আদায় হয়ে যাবে। (ফাতহুল কাদীর ১/৪৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১০১)
মুসাফির কসর না করে ভুলে চার রাকাতই পড়ে ফেললে কী করণীয়?
জিজ্ঞাসা: কসর নামাযের নিয়ত করে নাময শুরু করে ভুলে চার রাকাতই পড়ে ফেললাম এখন কি আবার নামায পড়বো নাকি?
উত্তর: মুসাফির ব্যক্তি কসর না করে যদি ভুলে চার রাকাতই পড়ে নেয় সেক্ষেত্রে দেখতে হবে সে দুই রাকাতের পর বৈঠক করেছে কি না, যদি করে থাকে তাহলে তার ঐ ফরয নামায আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে প্রথম দুই রাকাত ফরয এবং শেষ দুই রাকাত নফল হবে। আর ঐ ভুলের কারণে তাকে সাহু সিজদা করতে হবে। হাসান বসরী রাহ. বলেন, কোনো মুসাফির ভুলে যোহরের নামায চার রাকাত পড়ে নিলে সাহু সিজদা করবে।(মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/৫৪১)
আর দুই রাকাত শেষে যদি বৈঠক না করে তবে তার ফরয বাতিল হয়ে ঐ নামায নফল হয়ে যাবে। তাই এ অবস্থায় তাকে পুনরায় দুই রাকাত ফরয পড়ে নিতে হবে।(মারাকিল ফালাহ ২৩১; শরহুল মুনইয়াহ ৫৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৮)
ফরয নামাযে শেষের দুই রাকাতে ফাতিহার পর সূরা মিলিয়ে ফেললে কী করণীয়?
জিজ্ঞাসা: আমার প্রশ্ন হল্ চার রাকাত ফরয নামাযে শেষের দুই রাকাতের এক রাকাতে যদি আমি সূরা ফাতিহার সাথে সুরা মিলিয়ে ফেলি তাহলে কি সাহু সিজদা দিবো কি না ?
উত্তর: ফরয নামাযে তৃতীয়-চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে অন্য সূরা মিলানো হয় না, কিন্তু কেউ যদি ভুলবশতঃ অন্য সূরা মিলিয়ে ফেলে বা অন্য সূরা মিলানোর উদ্দেশ্য বিসমিল্লাহ পড়ে তাহলে এতে সাহু সেজদা ওয়াজিব হয় না। (আলমগীরী ১/১২৬, আপ কে মাসায়েল ৪/৫৯)
প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর দুরূদ এবং তৃতীয় রাকাতে ফাতিহার পর বিসমিল্লাহ পড়ে ফেললে কী করণীয়?
জিজ্ঞাসা: চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজে যদি প্রথম বৈঠকে তাশাহুদের পরে দুরুদ পড়ে ফেলি তাহলে সাহু সিজদা লাগবে কিনা? এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পরে যদি বিসমিল্লাহ পড়ে ফেলি, তাহলে সাহু সিজদা করা লাগবে কিনা?
উত্তর: চার রাকাত বা তিন রাকাতবিশিষ্ট নামাজে প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পর দাঁড়াতে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় ভুলে দেরি করলে বা দুরুদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে ফেললে সাহু সেজদা করতে হবে। (আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০)
ফরয নামাযে তৃতীয়-চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে অন্য সূরা মিলানো হয় না, কিন্তু কেউ যদি ভুলবশতঃ অন্য সূরা মিলিয়ে ফেলে বা অন্য সূরা মিলানোর উদ্দেশ্য বিসমিল্লাহ পড়ে তাহলে এতে সাহু সেজদা ওয়াজিব হয় না। (আলমগীরী ১/১২৬, আপ কে মাসায়েল ৪/৫৯)
ফরয নামাজের প্রথম দুই রাকাতে একই সূরা পড়া
জিজ্ঞাসা: জোহর বা আসরের ফরজ নামাজে যদি সূরা ফাতেহার সাথে দুই রাকাতে একই সূরা পড়া হয়,তাহলে কি সাহু সাজদা দিতে হবে? যদি সাহু সাজদা দিতে হয় তাহলে নিয়ম কী এই রকম যে তাশাহুদ, দুরুদ ও দুআ মাসুরার পর সালাম ফিরিয়ে দুই সাজদার পর আবার শুধু তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত এমনটি করতেন না। তবে একবারের ঘটনা হাদীস শরীফে এভাবে এসেছে,
عَنْ مُعَاذِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْجُهَنِيِّ، أَنَّ رَجُلاً، مِنْ جُهَيْنَةَ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الصُّبْحِ { إِذَا زُلْزِلَتِ الأَرْضُ } فِي الرَّكْعَتَيْنِ كِلْتَيْهِمَا فَلاَ أَدْرِي أَنَسِيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَمْ قَرَأَ ذَلِكَ عَمْدًا
মুআয ইবনু আবব্দুল্লাহ আল-জুহানী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জুহায়না গোত্রের এক ব্যক্তি তাকে জানান যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ফজরের নামাযের উভয় রাকাতে সূরা “ইজা যুলযিলাতিল আরধ” পড়তে শুনেছেন। তিনি আরো বলেন, আমি জানি না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভুলবশত এরূপ করেছিলেন না ইচ্ছাকৃতভাবে তা পড়েছিলেন। (আবুদাঊদ হা/৮১৬)
যার কারণে ফকীহগণ বলেন, ইচ্ছাকৃত ফরযের উভয় রাকাতে একই সূরা পাঠ করা অনুত্তম হলেও এ ভুলের কারণে সাহু সিজদা দিতে হয় না। (ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৪০; রদ্দুল মুহতার ১/৫৪৬ )
ইমাম উচ্চস্বরে কেরাতবিশিষ্ট নামাযে আস্তে কেরাত পড়লে কী করবে?
জিজ্ঞাসা: ফজরের ফরজ নামাজের জামাতে বাপের ইমামতিতে বেটা নামাজ পড়েছে। বাপ সূরা ফাতিহা এবং অন্য সূরা মনে মনে পড়েছে। ছেলেও কিছু বলে নাই। নামাজ শেষ। এটা শুদ্ধ হবে কি?
উত্তর: মাগরিব, এশা, ফযর এই ৩ ওয়াক্তের কেরাত হচ্ছে ‘ জাহরী’ অর্থাৎ প্রকাশ্য বা জোরে। যিনি ইমাম হবেন তিনি এই ৩ ওয়াক্তের শুধু ফরয নামাযের প্রথম ২ রাকাতে সুরা ফাতেহা ও কেরাত জোরে পড়বেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৭৯ ইলাউস সুনান) ‘ জাহরী’ অর্থাৎ প্রকাশ্য বা জোরে পড়ার অর্থ হল, অন্তত এতটুকু আওয়াজে পড়া যাতে নিজের পিছনে দাঁড়ানো কিছু লোক তা শুনতে পায়। সুতরাং উক্ত ব্যাখ্যার আলোকে ইমাম সাহেব যদি জাহরী (উচ্চস্বরে কেরাত বিশিষ্ট) নামাযে আস্তে সুরা ফাতেহা ও কেরাত পড়েন তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। সাহু সিজদা না দিলে নামায শুদ্ধ হবেনা বরং তখন নামায পুনরায় আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য, এ হুকুম কেবল জামাতের সাথে নামায আদায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আর একাকী নামাযী ব্যক্তি জাহরী নামাযে চাইলে আস্তেও কেরাত পড়তে পারে। তবে তার জন্য উত্তম হল জোরে পড়া। (রদ্দুল মুহতার ১/৫৩৫; শরহুল মুনয়াহ ৪৫৫-৪৫৬; আসসিআয়াহ ২/২৬৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ ১২৩)
জবাব দিয়েছেনঃ মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী (আল্লাহ্ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন)
প্রশ্নঃ নামাজে কোন কোন ভুলের কারনে সাহু সেজদা করতে হয়? উত্তর দিচ্ছেন শায়খ মতিউর রহমান মাদানী।
Leave a Reply